বন্ধ কি হবে না অবৈধ ড্রেজার!

সৌমিন খেলন

এনএনবি বাংলা.কম

অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে চলছে নদী থেকে বালু উত্তোলন
ছবি – এনএনবি বাংলা
কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) থেকে ফিরে : আদালতের নির্দেশনা থাকলেও নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় বন্ধ হচ্ছে না ড্রেজার। উপজেলার বিভিন্নস্থানে চোখে পড়ছে ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার দৃশ্য। যদিও প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থেই অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে এই বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন নেত্রকোনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। আদেশটি জারি করেছিলেন আদালতের বিচারক সোহেল ম্রং।
অবৈধ ড্রেজার ব্যবহারে বালু উত্তোলনে নদীর পাড় ক্ষতিগ্রস্ত, তীরবর্তী বাড়িঘর বিলীন, নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট, বালু উত্তোলনের শতশত নৌকা ও মেশিনের কারণে নদীর স্বাভাবিক গতিধারা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন আদালত। এরই সাথে বলা হয়, অবৈধভাবে ড্রেজার ব্যবহারে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ১১ ধারা লঙ্ঘন করা হয়। প্রনীত বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্তাপনা বিধিমালা, ২০১১ এর পরিশিষ্ট ‘ক’ তে উল্লেখিত চুক্তি ফরমের করা হয় ১নং শর্ত ভঙ্গ।
থানা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো, সাইনবোর্ড টানিয়ে লিখে দিতে হবে ‘ইজারা এলাকার বাহিরে বালু উত্তোলন করা অপরাধ, কেউ বালু উত্তোলন করলে থানায় খবর দিন।’ এরই সাথে ওই লেখার নিচে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মোবাইল নাম্বার করে দিতে হবে সংযুক্ত। মূলত অভিযোগ উঠেছিলো, উপজেলার বরুয়াকোনা বাজার সংলগ্ন মহাদেও নদীতে, চিকনটুপ ও প্যাঁচামারী মৌজায় মাহফুজ আলম (মামুন), খোরশেদ আলম ও রফিকুজ্জামান খোকন ৫/৬ শ নৌকার মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। বিষয়টি অবগত হয়ে আদালতের বিচারক ওই নির্দেশ জারি করেছিলেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা পেয়ে বিচারক সোহেল ম্রং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও অবৈধ কাজে ব্যবহৃত নৌকা ও মেশিনগুলো জব্দ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের এতো আয়োজন আর নির্দরশের পরও অনেকেই করছেন না আইনের কোনো তোয়াক্কা। আদালতের নিদর্শেও যেন তাদের কাছে কিছু নয়।
সম্প্রতি ভারত সীমান্তবর্তী নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বাজার এলাকায় কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সড়কে একটি ব্রিজের কাছ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের দৃশ্য চোখে পড়ে। পরে ড্রেজারের কাছে গেলে মেশিন চালনাকারী ব্যক্তিরা এনএনবি বাংলাকে জানান, নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল কদ্দুস বাবুল’র জন্য বালু তুলছেন তারা। ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন অবৈধ তারা জানেন কিন্ত কিছু করার নেই চেয়ারম্যানের নির্দেশ।
চেয়ারম্যান আব্দুল কদ্দুস বাবুল’র কাছে জানতে চাইলে তিনি এনএনবি বাংলাকে জানান, কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল রানা’র কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে বালু উত্তোলন করছেন তিনি। তাকে বলা হয়েছে ‘ডিপলি তুলে ফেলেন’। এরই সাথে চেয়ারম্যান দাবি করেন, বালু তো আর নিজের বাড়িতে নিচ্ছেন না, বালু নেয়া হচ্ছে গরুর হাটের জন্য। একপর্যায় চেয়ারম্যান মোটরসাইকেলের জ্বালানি খরচ বাবদ সাংবাদিককে ৫০০ টাকা উৎকোচও দিতে চান।
কথার সত্যতা জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা’র সাথে কথা বললে তিনি এনএনবি বাংলাকে জানান, চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্য মোটেও সত্য নয়। উপজেলা প্রশাসন থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের জন্য কোনো ধরণের অনুমতি দেয়া হয়নি। এটা চরম মিথ্যা।
 
শুধু কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সড়কেই নয় উপজেলার সিধলী বাজারসহ বিভিন্ন জায়গাতেই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দৃশ্য চোখে পড়ছে হরহামেশাই। উত্তোলনকারী বা মেশিন চালনাকারীদের মুখ থেকে বারবার আসে প্রভাশালীদের নাম। তবে মেশিনগুলো নাম উঠে আসা আদতে ওইসব ব্যক্তিদের কি-না, বিষয়টি নিশ্চিত হতে না পারায় আপাতত নাম প্রকাশ সম্ভব হয়নি। সেক্ষেত্রে যে বা যারা বালু উত্তোলন করান তারা থাকছেন পর্দার আড়াল!
কাজের লোকজনের মুখোমুখি হলে তারা বলছেন ‘আমরা কামলা, গরীব মানুষ, আমাদের ছবি তুইলেন না। আমাদের মাইরেন না। কেউ এর কিছু হইতো না, পরে মেশিন পুড়বো আর জরিমানা হইবো আমরার। আমরা গরীব আমাদের মাইরেন না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *