
সৌমিন খেলন : যে শোক প্রকাশের ভাষা নেই, সত্যিই নেই… সব শোক প্রকাশের ভাষা হয় না। কিছু শোক ‘শোক’ শব্দটিকেও তুড়িতে ডিঙিয়ে চলে যায় দূর-বহুদূর।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) থেকেই আকস্মিকভাবে থমকে যায় নেত্রকোনার নাগরিক সমাজ। ফাগুন মনে আগুন লাগা বসন্তে নেমে আসে অন্ধকার, ঘোর অন্ধকার…
কবি, সাহিত্যক, সাংবাদিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও দলমত নির্বিশেষে এমনকি রাজনৈতিক নানা সংগঠন। সর্বোপরি নেত্রকোনার সাহিত্য সমাজ তো আরও হতবিহ্বল!
কারণ, ‘নেত্রকোনার বাতিঘর’ হিসেবে আখ্যায়িত হওয়া তাদের প্রিয় ব্যক্তি বটবৃক্ষ সাহিত্য সমাজের সভাপতি অধ্যাপক কবি কামরুজ্জামান চৌধুরী চলে গেছেন। হয়তো ততক্ষণে তিনি দূর আকাশের তারা। পথ দেখানো ধ্রুব তারা।
কবির প্রস্থানে সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭ টা থেকে শহরের মোক্তারপাড়া এলাকার বকুলতলায় ‘নাগরিক স্মরণানুষ্ঠান’ শুরু হয়।

প্রাণের টানে প্রিয় মানুষটির টানে নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলেও বিশিষ্টজনেরা এতে অংশ নেন। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকেন কবিকে নিয়ে একটু স্মৃতি ব্যক্ত করার জন্য।
নিজের মূল্যবান সময় ব্যয় করে অনুষ্ঠানে তেমনই ছুটে এসেছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু (এমপি)।
তবে জাতির বীর এই সন্তান প্রতিমন্ত্রী কবিকে নিয়ে বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন। কবির প্রস্থান মেনে নিতে না পারায় বুকের চাপা কষ্ট ঢেলে দিয়ে বলার চেয়ে ডায়েসের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদলেন আর বারবার চোখ মুছে যাচ্ছিলেন তিনি। কিছুতেই থামছিলো না তাঁর কান্না।

এমন দৃশ্যে পুরো অনুষ্ঠান তথা উপস্থিত সকলের মধ্যে নেমে আসে আরো বিষাদ।
কাঁদতে কাঁদতে প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, আজ এই বকুলতলায় বসন্তকালীন উৎসব হওয়ার কথা ছিলো। কামরুল অনুষ্ঠানে থাকতো, কবিতা পড়তো কিন্তু আজ করতে হচ্ছে তাকে ঘিরে শোকসভা, স্মরণানুষ্ঠান!
কামরুল সংস্কৃতি ও সংগঠনের মধ্য দিয়ে নেত্রকোনাকে তুলে ধরেছেন৷ কামরুল আছেন, কামরুল থাকবেন। এসব কথা বলে কেঁদে কেঁদে মঞ্চ থেকে একপর্যায় নেমে যান প্রতিমন্ত্রী।
কবি’র স্মরণানুষ্ঠানে অধ্যাপক মতিন্দ্র সরকার’র সভাপতিত্বে সঞ্চালনা করেন সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক কবি সাইফুল্লাহ এমরান। এতে স্থানীয় ও ঢাকা থেকে প্রাণের টানে ছুটে আসা কবি, সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা অংশ নেন।
