পত্রিকার অর্ধশিক্ষিত সম্পাদক’র হাসপাতাল নামের কসাইখানা!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
এনএনবি বাংলা.কম

সিবি হসপিটাল, ইনসেটে মালিক আনিসুর রহমান

সাতক্ষীরা : মনে কত স্বপ্ন বুনে আশা করেছিলেন সাতক্ষীরার মানুষ! সিবি অর্থাৎ চায়না বাংলা হাসপাতালে সাধ্যের মধ্যে মিলবে কাঙ্খিত বা প্রয়োজনীয় সবটুকু চিকিৎসাসেবা। কিন্তু তাদের স্বপ্ন আর আশা সবই হয়েছে যেন সে গুড়ে বালি।

প্রকৃত অর্থে চিকিৎসাসেবা তো মিলছেই না বরং নিজ স্বার্থ হাসিলে হাসপাতাল নামের ক্লিনিকটিকে বানানো হয়েছে কসাইখানা। তথাকথিত স্বাস্থ্যসেবা এই প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে কেউ একবার ঢুকলে শুরুতেই অকারণ পরীক্ষানিরীক্ষার জালে ফেঁসে আর্থিকভাবে হয়ে যান সর্বস্বান্ত। অপরদিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে সঙ্কটাপন্ন হয়ে যায় রোগীর জীবন।

এভাবেই সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল সামনে প্রতিষ্ঠানটি চলছে আর চালাচ্ছেন পত্রিকা বানিয়ে সাংবাদিক বনে যাওয়া অল্পশিক্ষিত ব্যক্তি আনিসুর রহমান। তিনি ‘সুপ্রভাত সাতক্ষীরা’ নামে প্রকাশ করেন দৈনিক এক পত্রিকা। তিনিই ওই স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মালিক।

তবে অমানবিক এমনসব ক্ষতির সম্মুখীন হয়েও নির্বিকার ভুক্তভোগীরা। কারণ, পত্রিকা প্রকাশের পর থেকেই তার গলাকাটা এই বাণিজ্য লাগামহীন। তার হাতে না-কি সাতক্ষীরা জেলা প্রেসক্লাবের একাংশের লাগাম!

স্থানীয়দের কাছে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আধা শিক্ষিত আনিসুর রহমান’র হাতেই সেবামূলক দুটি প্রতিষ্ঠানের চাবিকাঠি! যদিও নেই তার ডাক্তারির অভিজ্ঞতা, না আছে সাংবাদিকতার দক্ষতা। তারপরও…

যেভাবে উঠে এলো এবার তার ফিরিস্তি। তা নিয়ে নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, দেশের নির্ভীক সাংবাদিক মো. সাইদুর রহমান রিমন।

পোস্টের একপর্যায়ে তিনি যা লিখেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো, ‘ঢাকার একজন সাংবাদিক বন্ধু তার অসুস্থ বাবাকে চায়না বাংলা হাসপাতাল নামক টাকা হাতানোর কশাইখানায় ভর্তি করে কী যে বিপাকে পড়েছেন তার ইয়োত্তা নেই।

পায়ের ক্ষত নিয়ে ভর্তি করা ওই রোগির সিটি স্ক্যান, নাক কান, গলা, বুকের সব পরীক্ষাই করিয়ে ছেড়েছেন তিনি। আনিসুর রহমানের হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের যতো মেশিনপত্র আছে তার সবকিছুর সঙ্গেই রোগির পরিচয় ঘটানো হয়েছে।

১৮ ধরনের পরীক্ষান্তে ৬০ হাজার টাকা বিলও হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে অথচ রোগ নির্ণয় পর্যন্ত করতে পারেননি আনিসুরের ডাক্তার কর্মচারীরা। ফলে দিন দিনই ওই সাংবাদিক পিতার শারিরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে এবং তাকে বাঁচানোর জন্যই সাতক্ষীরার চায়না বাংলা (সিবি) হাসপাতালটি ছেড়ে ঢাকার হাসপাতালে স্থানান্তরে বাধ্য হতে হয়েছে।

ঢাকার হাসপাতালে ৬০০ টাকার এক পরীক্ষাতেই রোগির রোগ নির্ণয় হয়েছে, যথাযথ চিকিৎসাও চলছে তার। তাহলে আনিসুরের সিবি হাসপাতাল ১৮টি পরীক্ষা চালিয়েছে কিসের ধান্ধায়? রোগিদের সঙ্গে এ কেমন বর্বরতা? এ কেমন নির্লজ্জ বাণিজ্যিক ফাঁদ? সাংবাদিকদের থেকে সাধারণ মানুষ অনেক বেশি মানবিকতা আশা করেন।

সম্পাদক পরিচয় দিয়ে ক্লিনিক বাণিজ্যের নামে বর্বর কশাই হতে কী বিবেকে একটুও বাধে না? ছিঃ, আনিসুর ছিঃ। একজন নিরীহ সাংবাদিককে বাণিজ্যের বলি বানাতে একটুও বুক কাঁপেনি? আপনার তত্বাবধানে কেমন পত্রিকা হতে পারে, সেখানে সাংবাদিকরা আদৌ পেশাজীবী হয়ে উঠতে পারে কি না, সর্বোপরি আপনার তত্বাবধানকৃত গ্রæপ সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নিয়ন্ত্রক হলে জেলাবাসী যে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থায় পড়বে তা কী বলার অপেক্ষা রাখে?

দুর্ভাগ্যের জনবসতিতে দুর্ভাগা সাংবাদিকতা! সেখানে অনৈতিক বাণিজ্য আর তদবিরবাজিই গিলে খাচ্ছে সবকিছু। একদা এই সাতক্ষীরারই সংসদ সদস্য আফম রুহুল হক আওয়ামীলীগ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। তার আ¤্রয়ে প্রশ্রয়েই ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু গোটা স্বাস্থ্য সেক্টরকেই গিলে খেয়েছিল। আর সাতক্ষীরায় আফম রুহুল হকের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে বিএনপি জামায়াতের যারা ছিলেন তারাই সাতক্ষীরায় পাইকারিভাবে ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স হাতিয়ে নিয়েছেন।

মূলত চিকিৎসা সেবার নামে গলাকাটা বাণিজ্যের আড়ালে অনেকেই নিজেদের পূণর্বাসন করেছেন, পরবর্তীতে সুযোগ সুবিধা পেয়েই আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করে দন্ডমুন্ডের কর্তায় পরিনত হয়েছেন। পাইকারি সে অনুমোদনের সুবাদেই সাতক্ষীরার অলিগলি, গ্রামের মোড়েও ব্যঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সাধারণ মানুষজন সেসব সেন্টারে সর্বস্ব খুইয়ে তার খেসারত দিচ্ছে বৈ কি!’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *