‘বাবা’র সাথে চলে গেছে বৃদ্ধাদের সুদিন!

সৌমিন খেলন
এনএনবি বাংলা.কম

নয়ন যোগী আশ্রম | ছবি- এনএনবি বাংলা

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) থেকে ফিরে : ‘বাবা’ ছিলেন চিন্তা ছিলো না, কোনো কষ্ট ছিলো না। তিনি অনাথ বৃদ্ধা সন্তানদের ছেড়ে চলে গেছেন দূর বহুদূর। যেখানে একবার গেলে কেউ আর ফিরে না। ‘বাবা’ সেখানেই চলে গেছেন। তিনি একা যাননি তাঁর সাথে চলে গেছে অসহায় বৃদ্ধা সন্তানদের সুদিন!

দীর্ঘশ্বাস আর দুঃশ্চিন্তা ঘেরা নানানরকম কথাবার্তার মধ্যে এমনই ছিলো বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা শোভা রাণী, শিলা রাণী পাল ও সন্ধ্যা রাণী দেব’র কিছু কথার সারমর্ম। তাদের মতে, জীবনের শেষলগ্নে এসে এ যেন আবারো নতুন আরো এক অগ্নিপরীক্ষা…

সাধুপুরুষ নিত্যানন্দ গোস্বামী নয়ন’র জন্য বৃদ্ধাশ্রম বাসিন্দা অসহায় বৃদ্ধা মাদের হাহাকার | ছবি- এনএনবি বাংলা

স্বামী সংসার সন্তানাদি বা আত্মীয়স্বজন। সব হারিয়ে ‘বাবা’র এখানে মাথাগোঁজার ঠাঁই পেয়েছিলেন গরীব দুঃখী বা পরিস্থিতির শিকার অসহায় বৃদ্ধারা। কিন্তু তাদের সেই ‘বাবা’ও আজ আর নেই। তাইতো নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত আজ তাদের বড় দুর্দিন।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার চণ্ডিগড় ইউনিয়নে নাথ পাড়া গ্রামে মানব কল্যাণকামী অনাথালয়। সেখানেই রয়েছে এক বৃদ্ধাশ্রম। যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, সাধুপুরুষ স্বর্গীয় নিত্যানন্দ গোস্বামী নয়ন।

‘বাবা’ ছাড়া বৃদ্ধাশ্রমে আজ বড় দুর্দিন | ছবি- এনএনবি বাংলা

তিনি গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর, সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ৮ টার দিকে দেহত্যাগ করেন। এরপর থেকেই নানারকম সংকটে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু বৃদ্ধারাই নন ওই সাধুপুরুষের প্রতিষ্ঠিত মানব কল্যানকামী অনাথালয়ের কোমলমতি শতাধিক শিশুদেরও আজ একই পরিস্থিতি।

এমনই দাবি করছেন সাধুপুরুষের সহধর্মিণী আশ্রমমাতা নিশা দেবী। তিনি এনএনবি বাংলাকে জানান, স্বামী থাকাবস্থায় সব ঠিকঠাক চলছিলো। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ আর বৃদ্ধা সকলের মুখেই ছিলো হাসি। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে মলিন হচ্ছে সবার মুখ। অর্থ সংকটে অনিশ্চয়তায় পড়ছে সকলের ভবিষ্যৎ তথাপি সেবামূলক এই প্রতিষ্ঠান।

সাধুপুরুষ নিত্যানন্দ গোস্বামী নয়ন’র জন্য বৃদ্ধাশ্রম বাসিন্দা অসহায় এক বৃদ্ধা মা’র হাহাকার | ছবি- এনএনবি বাংলা

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে আগামী দিনগুলোতে হয়তো দুবেলা দুমুঠো অন্ন নিয়েও দুঃশ্চিতা করতে হবে। একে তো বটবৃক্ষের ছায়াহীন তারপর এখন আবার করোনা পরিস্থিতি। ব্যয়বহুল আর সেবামূলক এতো বড় একটি প্রতিষ্ঠান ধরে রাখতে গিয়ে দিশেহারা আশ্রমমাতা নিশা দেবী।

আশ্রম মাতা নিশা দেবী অসহায় বৃদ্ধাদের খাবারদাবারের সমস্যার কথা শুনছেন | ছবি- এনএনবি বাংলা

তবে শেষ পর্যন্ত কি অভাব আর অনটনের মধ্য দিয়ে ধরে রাখতে পারবেন তিনি স্বামীর মানবসেবা মূলক বিশাল এই কর্মযজ্ঞ? আর ধরে না-ই যদি রাখতে পারেন সেক্ষেত্রে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে অনাথ শিশু আর অসহায় বৃদ্ধারা?

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১১ মার্চ। নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার চণ্ডিগড় ইউনিয়নের নাথ পাড়ায় নিত্যানন্দ গোস্বামী নয়ন’র একান্ত প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণ অবাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান মানব কল্যানকামী অনাথালয়।

তারপর একে একে সেবার হাত প্রসারিত করে ৩ একর ৩৭ শতাংশ ভূমিতে তিনি সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গড়ে তুলেন- বৃদ্ধনিবাস, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাদের আশ্রয়কেন্দ্র, দাতব্য চিকিৎসালয়, কম্পিউটার ও সেলাই প্রশিক্ষণকেন্দ্রসহ সেবামূলক নানারকম প্রতিষ্ঠান।

শুরু থেকে এখন অবধি মানব কল্যানকামী অনাথালয়ে থেকে পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক। যাদের অনেকেই এখন সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরে রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *