প্রধানমন্ত্রীকে নেত্রকোনার করোনা পরিস্থিতি জানালেন ডিসি

সৌমিন খেলন : করোনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নেত্রকোনার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মঈনউল ইসলাম।

দেশে করোনা ভাইরাস শনাক্ত পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জেলার কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে ধারাবাহিকভাবে যোগাযোগ করছেন। এরই অংশ হিসেবে সোমবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন।

এসময় নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মঈনউল ইসলাম ও জেলা পরিষদ চেয়বরম্যান প্রশান্ত কুমার রায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেন। করোনা নিয়ে জেলার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন তারা।

ডিসি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানান- শুক্রবার (১০ এপ্রিল) একজন নার্সসহ নেত্রকোনায় প্রথমবারের মতো দুইজন করোনা শনাক্ত হয়। পরে তা বেড়ে গিয়ে শনিবার (১৮ এপ্রিল) ২৪ এ দাঁড়ায় শনাক্তের সংখ্যা। তাদের মধ্যে ৫ জন হাসপাতালের নার্স ও অন্যান্য স্টাফ। বাকিরা নেত্রকোনার বাহিরের সংক্রমিত এলাকা থেকে এসেছেন।

করোনা মোকাবেলায় প্রথম থেকেই জেলা প্রশাসন থেকে পাঁচটি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তা হলো- চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত, কমিউনিটি সংক্রমণ প্রতিরোধ, কর্মহীন দুস্ত মানুষদের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া, নিত্যপণ্য তথা বাজার ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকরা কাজ করছেন।

হাওর বেষ্টিত এই নেত্রকোনার চলতি বোরো ফসল উৎপাদন বা ফলন সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করেন ডিসি। তিনি জানান- জেলায় ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ হয়েছে।ইতোমধ্যে হাওরের ১০ হাজার হেক্টর জমির ধান কেটে ঘরে তোলা হয়েছে। বাম্পার ফলনের সাথে এবার দামও বেশ ভালো পাচ্ছে কৃষক। মণ প্রতি ধানের দাম মিলছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা।

ডিসির এসব কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী জেলাবাসীকে স্বাস্থ্য পরামর্শ দেন। শেখ হাসিনা বলেন- আক্রান্তের সংখ্যা যেন আর না বাড়ে চেষ্টা করবেন, সেভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখবেন। সাবান দিয়ে ঘনঘন হাত ধোয়া, মুখে মাস্কটা পড়ে থাকা, জনসমাগমে না যাওয়া, গরম পানি ঘনঘন পান করা।

এরপর প্রধানমন্ত্রী সরাসরি নেত্রকোনা জেলা পরিষদ চেয়বরম্যান প্রশান্ত কুমার রায়ের সাথে কথা বলতে চান। যুক্ত হন প্রশান্ত কুমার রায়। তিনি বলেন- বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি প্রধানমন্ত্রী। আপনাকে দেখে ছাত্রলীগ কর্মী হয়েছিলাম। আপনার নেতৃত্বে অনেক আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। এবার অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। অতীতের লড়াই সংগ্রামে জয়ী হয়েছি এই যুদ্ধেও জয়ী হতেই হবে।

ত্রিশ লাখ শহীদের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু বাস্তবায়ন করতে পারেনি। সে স্বপ্ন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে আপনি উন্নত সম্বৃদ্ধি নিয়ে গেছেন। শহীদের আত্মা শান্তি পেয়েছে। করোনা যুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন পরিষদ চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা প্রশান্ত।

একপর্যায় তিনি বলেন- করোনা যুদ্ধে মানুষের পাশে দাঁড়াতে জেলা পরিষদ থেকে জেলা প্রশাসকের ত্রাণ তহবিলে সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও জনসাধারণের মধ্যে ১০ উপজেলায় সাবান ও মাস্ক বিতরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সুস্থ থাকলে বাংলাদেশ সুস্থ থাকবে, প্রধানমন্ত্রীর মুখে হাসি থাকলে বাংলাদেশের মানুষ হাসতে জানে বলেও মন্তব্য করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায়।

তৃণমূল পর্যায়ে অতিরিক্ত ৫০ লাখ মানুষকে ১০ টাকা কেজি চাল কেনার কার্ড দেয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন- সেই তালিকা যেন যথাযথ হয়। কোনোরকম যেন জটিলতা না হয় প্রকৃত দুস্তরা যেন পায়। কিন্তু যারা বয়স্ক বিধবা ভাতা পাচ্ছে তারা এ সহায়তা পাবে না। যারা সামাজিক সুরক্ষা অন্যান্য সুবিধা বঞ্চিত তাদের জন্য এ সহায়তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *