ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
এনএনবি বাংলা.কম
নেত্রকোনা : করোনা (কোভিড-১৯) ভাইরাস নেত্রকোনায় রোববার (১০ এপ্রিল) এক নার্সসহ দুইজন আক্রান্ত প্রথম শনাক্ত হয়। পরে ধাপে ধাপে বেড়ে যায় আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা। বর্তমানে ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে নেত্রকোনা। মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ জন।
এদিকে করোনা যুদ্ধে জেলা প্রশাসন, পুলিশসহ সরকারের অন্যান্য বাহিনী, রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো মাঠে নামেন। শুরু হয় জেলাজুড়ে সচেতনতা কার্যক্রম, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের মতো কর্মকাণ্ড। পৌরসভা থেকে শুরু করে জেলা রেডক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে শহরজুড়ে ছিটানো হয় জীবাণুনাশক স্প্রে। যদিও বিভিন্ন দিক সামলাতে গিয়ে গতি হারায় জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থানে সচেতনতা প্রচারণা, খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়াসহ নানাদিক সামলাতে গিয়ে জীবাণুনাশক ছিটানো আগের মতো হচ্ছে না। শুরুতে শহরের বিভিন্ন প্রবেশ দ্বারে বহিরাগতদের থেকে শুরু করে পাড়ার গলিতে গলিতে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হতো। এখনও করা হয় তবে নিয়মিত না। তখন পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন সড়কে গাড়ি দিয়ে জীবাণুনাশক পানি দিয়ে সড়ক ধুয়ে দেয়া হতো সেটিও এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না তেমন।
করোনা যুদ্ধে সরকারের প্রতিটি দফতর নানাবিধ দায়িত্বপালন করছে। অদৃশ্য যুদ্ধের অংশীদার হয়েছে সবাই। ঠিক তেমনই এই যুদ্ধে অন্যান্য জেলাতে ফায়ারসার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। কিন্তু নেত্রকোনার ক্ষেত্রে ঘটেছে ব্যতিক্রম। চলতি ভয়াবহ এই সময়েও মাঠে দেখা যাচ্ছে না দফতরের কাউকে। যদিও অন্যান্য জেলাগুলোতে দেখা যাচ্ছে রাতদিন ফায়ারসার্ভিস ত্রাণ পৌঁছে দেয়া থেকে শুরু করে সড়কগুলোতে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন।
জেলা রেডক্রিসেন্টের যুব প্রধান এসএম জিল্লুর রহমান রাজিব এনএনবি বাংলাকে জানান- প্রচন্ড চাপ সামলাতে হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গিয়ে নাভিশ্বাস! প্রতিদিন বাজার রাস্তাঘাট সামলানো এরই সাথে সরকারী বেসরকারি ত্রাণ পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করতে হয়। রেডক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে জীবাণুনাশক ছিটানো হয়েছে প্রচুর শহরের কোথাও বাদ যায়নি। এটি চলমান রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি। তবে ব্যঘাত ঘটছে জনবলের কারণে। ফায়ারসার্ভিসকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না তারাও অন্তত এ কাজটি করতে পারতো এতে উপকৃত হতো জেলাবাসী। এই যুদ্ধ সকলের অংশ নেয়া উচিৎ।
শহরে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে ফাহিম রহমান খান পাঠান, জাকারিয়া খান রিজন। তারা এনএনবি বাংলাকে জানান, খাদ্য সহায়তা দেয়া থেকে মানুষকে সচেতন করার কাজটি করছেন তারা। তবে এরমধ্যে মাঝেমধ্যেই গাড়ি নিয়ে পায়ে ও হেঁটে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন রিজন ও তার সহযোদ্ধারা। খেয়াল রাখছেন শহরের বহিরাগতদের প্রতি। রিজন জানান- এরমধ্যেও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আসা যাত্রীবাহী একটি এ্যাম্বুলেন্স আটক করে থানায় সোপর্দ করেন তিনি। করোনা যুদ্ধের এই সময়ে ফায়ারসার্ভিসের আত্মত্যাগী যোদ্ধাদের জেলাবাসী পাশে পেলে উপকৃত হতো। সেই সাথে স্বেচ্ছাসেবকরাও সাপোর্ট পেতো। করোনা যুদ্ধে অচিরেই মাঠে নামবে জেলা ফায়ারসার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। এমনটাই আশা করছেন এই করোনা যোদ্ধারা।
আইনজীবী মোজাম্মেল হোসেন মীরধা। এনএনবি বাংলাকে তিনি জানান- আত্মবলিদানকারী একটি দফতর ফায়ারসার্ভিস। মানুষের কাছে তাদের অবদান অনেক। এই করোনা যুদ্ধেও বসে না থেকে নেত্রকোনা ফায়ারসার্ভিস জেলাবাসীর পাশে থাকার আশা করেন তিনি। অন্তত জীবাণুনাশক স্প্রেটুকু ছিটালেও বড় ভূমিকা পালন হবে।
জেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারি গাজী মোজাম্মেল হোসেন টুকু এনএনবি বাংলাকে জানান- রেডক্রিসেন্ট শহর থেকে গ্রাম। জেলার দশ উপজেলা চষে বেড়াচ্ছে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। শুরুর দিকে খাদ্য সংকট ছিলো না কারো। তবে দিন বাড়ার সাথে খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে। এসব দেখভাল করতে গিয়ে সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম কিছুটা গতিহীন হচ্ছে। তবে এসময় ভূমিকা রাখতে পারতো জেলার ফায়ারসার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স। তাদেরকে এই করোনা যুদ্ধে নেত্রকোনার মানুষ সহযোদ্ধা হিসেবে মাঠে দেখতে চায়। যেকোনোভাবেই কাজ করে তারা এই করোনা যুদ্ধে অংশ নিতে পারে।
জেলা ফায়ারসার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাইদুল্লাহ্ এনএনবি বাংলাকে জানান- শুরুর দিকে কয়েকদিন কাজ করেছেন তারা। তবে পরবর্তীতে নিরাপদে থাকার জন্য মহাপরিচালকের নির্দেশে আপাতত তারা করোনা সংক্রান্ত কোনো কাজে অংশ নিচ্ছেন না। উপ-সহকারী পরিচালক তিনি কিডনি ও হার্টের সমস্যায় ভুগছেন বলে দাবি করেন।
এদিকে ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন এনএনবি বাংলাকে জানান- বসে থাকার মতো কোনো নোটিশ বা নির্দেশ নেই। মঙ্গলবার ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনার কেন্দুয়া পর্যন্ত তিনি নিজেও জীবাণুনাশক ছিটিয়েছেন। কিন্ত এসময়ে নেত্রকোনা ফায়ারসার্ভিসের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে জানা ছিলো না। ফায়ারসার্ভিস একটি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান করোনা যুদ্ধে অবশ্যই নেত্রকোনায় মাঠে নামবে।