সৌমিন খেলন : করোনা (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে সামাজিক দূূরত্ব নিশ্চিতকরণে রোজা রেখে তপ্ত রোদে ভরদুপুরেও নজরদারি তথা প্রচারণা চালাচ্ছিলেন অফিসার ইন-চার্জ মোহাম্মদ আবদুল আহাদ খান।
নেত্রকোনার হাওর অধ্যুষিত উপজেলা মোহনগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জ তিনি। বিচক্ষণতার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে থানায় যোগদানের অল্প সময়েই নখদর্পনে নিয়েছেন উপজেলার সামাজিক ও রাজনৈতিক চালচিত্র।
সোমবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে করোনা প্রতিরোধে চালানো প্রচারণায় অন্ধ বৃদ্ধ ভিক্ষুকও এড়ায়নি ওসির মানবিক চোখ।
‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, নিজে সুস্থ থাকুন, পরিবার প্রিয়জনসহ গোটা দেশের মানুষকে সুস্থ রাখুন। আপনারা অহেতুক বাইরে না থেকে ঘরে চলে যান।’ ইমারজেন্সি হ্যান্ড মাইক দিয়ে কথাগুলো বলে ঠিক এভাবেই মোহনগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে করোনা সচেতনতায় প্রচারণা চালাচ্ছিলেন ওসি আহাদ।
হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় হ্যান্ড মাইকে বলা তার সচেতনতার কথা। সড়কে রোদ মাথায় নিয়ে বসে থাকা অন্ধ এক বৃদ্ধ ভিক্ষুককে দেখে থমকে যান তিনি। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর অসহায় ভিক্ষুককে তিনি বলেন- ‘কষ্ট করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনার ভিক্ষার প্রয়োজন নেই। আপনাকে পুরো এক সপ্তাহের খাবার কিনে দেবো আমি। আপনি এখন থেকে ঘরে থাকবেন’। একবাক্যে ঘরে থাকার জন্য ওসির কথায় রাজি হলেন ওই ভিক্ষুক অন্ধ বৃদ্ধ মানুষটি।
এসব বলার পর মানবিক ওসি আহাদ পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেন বৃদ্ধকে মাস্ক পরিয়ে দেয়ার জন্য। পরে বাজার থেকে তাৎক্ষণিক পুরো সপ্তাহের খাবার চাউল, ডাল, পিয়াজ, রসুন, তেল ও লবণসহ সংরক্ষণ যোগ্য অন্যান্য কিছু খাবার কিনে নিজ গাড়িতে করে অন্ধ বৃদ্ধ ভিক্ষুককে বাড়িতে পাঠান তিনি। দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ ভিক্ষুক মো. বাচ্চু মিয়া বারহাট্টা সিংধা ইউনিয়নের নউল্লারচর গ্রামের বাসিন্দা।
ওসির জন্য দোয়া করে এনএনবি বাংলাকে তিনি জানান- কষ্ট করে আগামীকাল আর তার ভিক্ষা করতে বের হতে হবে না। এতে শারীরিক আর মানসিক দখল থেকে মুক্ত হলেন তিনি। কেন না সড়কে তুলনামূলক মানুষ কম থাকায় ভিক্ষাও পাওয়া যায় না আর তেমন।
এদিকে অফিসার ইন-চার্জ মোহাম্মদ আবদুল আহাদ খান এনএনবি বাংলাকে জানান- জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আকবর আলী মুনসীর নির্দেশনা রয়েছে চোখে পড়া মাত্র দুস্তদের সহযোগিতা করার জন্য। তাছাড়া অন্ধ বৃদ্ধের বিষয়টি হৃদয় নাড়া দেয়ার মতো।মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার পূরণে চিরদিন জনতার পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন হৃদয়বান এই পুলিশ কর্মকর্তা।